পাঠ ১

পাঠ ১আমাদের জীবনের জন্য খোদার উদ্দেশ্য

খোদা প্রেমময়। তিনি এমন কাউকে ভালবাসতে চান, যে তাঁর ভালবাসার প্রতিদান দিতে পারবে। গাছপালা ও জীবজন্তু তাঁকে ভালবাসতে পারে না। তিনি এমন কাউকে ভালবাসতে চান, যে তাঁর ভালবাসাকে মূল্যায়ন করবে এবং তা অন্যের জীবনকেও অর্থবহ করে তুলবে। আর তাই তিনি শ্রেষ্ঠজীব হিসেবে তাঁর মত করে মানুষ সৃষ্টি করলেন।

আল-কোরআন; সূরা বাকারা ৩০-৩৯ এবং সূরা আ’রাফ ১৮-২৫ আয়াত এবং আল-তৌরাত; পয়দায়েশ ১ঃ ২৪ আয়াত অনুযায়ী আমরা দেখতে পাই, খোদা মানুষকে পৃথিবীর প্রতিনিধি হিসেবে সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন। এমনকি ফেরেশতাগণ থেকেও অধিক জ্ঞান দান করেছিলেন। খোদা হযরত আদমের জন্য একজন নারীও সৃষ্টি করেছিলেন, যাঁর নাম দিয়েছিলেন হযরত হাওয়া।

কিতাব থেকে আমরা আরো জানতে পারি যে, খোদা তাঁদের উভয়কে বেহেশতের বাগানে রেখেছিলেন এবং সাচ্ছন্দে সেখানে বসবাস ও সমস্ত কিছু আহার করার অনুমতিও দিয়েছিলেন। কিন্তু মানুষ খোদার কতটুকু বাধ্যতায় জীবন-যাপন করে তা দেখার জন্য তিনি তাঁদেরকে, বাগানের হাজারো গাছের মধ্য থেকে একটি মাত্র গাছের ফল খেতে নিষেধ করে দিলেন। সাথে সাথে এ সাবধানবাণীও জানিয়ে দিয়েছিলেন, যদি তাঁরা এ আদেশ অমান্য করে তাহলে তাঁরা যালিমদের অর্ন্তভূক্ত হবে অর্থাৎ খোদার সাথে তাঁদের সুন্দর সম্পর্কের মৃত্যু ঘটবে অর্থাৎ তাঁর সাথে দূরত্ব বেড়ে যাবে।

এর পরের ঘটনা আমরা সবাই জানি। হযরত আদম (আঃ) এবং তাঁর স্ত্রী খোদার দেয়া একটি মাত্র আদেশ পালনে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তাঁরা উভয়েই শয়তানের পাতানো ফাঁদে পড়ে বেহেস্তর বাগান থেকে বিতাড়িত হলেন। এভাবেই মানবজাতি গুনাহ্রে জগতে প্রবেশ করলেন। আর সেই থেকে গুনাহ্ আমাদেরকে খোদার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। যেহেতু, খোদা প্রেমময়, সেহেতু, তিনি এই গুনাহ্ থেকে মানবজাতিকে উদ্ধার করতে ওয়াদাবদ্ধ হলেন।

আল-তৌরাত; পয়দায়েশ ৩ঃ ১৫ আয়াত – আমি তোমার (শয়তান) ও স্ত্রীলোকের মধ্যে এবং তোমার বংশ ও স্ত্রীলোকের মধ্য দিয়ে আসা বংশের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি করব। সেই বংশের একজন তোমার মাথা পিষে দিবে আর তুমি তার পায়ের গোড়ালিতে ছোবল মারবে।

আল-কোরআন; সূরা বাকারা ৩৮ আয়াত – … যখন আমার পক্ষ হতে তোমাদের নিকট সৎপথের কোন নির্দেশ আসবে তখন যারা আমার সৎপথের নির্দেশ অনুসরণ করবে তাদের কোন ভয় নাই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।

সূরা আ’রাফ ২৪ – ২৫ আয়াত – … তোমরা একে অন্যের শত্রু এবং পৃথিবীতে কিছু কালের জন্য তোমাদের বসবাস ও জীবিকা রহিল, সেখানেই তোমরা জীবন যাপন করবে, সেখানেই তোমাদের মৃত্যু হবে এবং তথা হতেই তোমাদিগকে বের করে আনা হবে।

উপরোল্লোখিত আয়াতসমূহ থেকে আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারি যে, খোদা আমাদেরকে শয়তানের কবল থেকে অর্থাৎ গুনাহ্ থেকে উদ্ধার করে পুনরায় স্বমহিমায় পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য সৎপথের এক নির্দেশ বা পরিচালনা পাঠাবেন বলে ওয়াদাবদ্ধ। আল-তৌরাতে উল্লেখ আছে, তিনি এমন এক নির্দেশক পাঠাবেন যিনি স্ত্রীলোকের গর্ভ হতে আগমন করবেন। আর তাঁর এই নির্দেশিত পথ যারা অনুসরণ করবে, পরকালে তাদের আর কোন ভয় থাকবে না এবং তারা দুঃখিতও হবে না।

আল-তৌরাত; দ্বিতীয় বিবরণ ৭ঃ ৯ আয়াত – কাজেই তোমরা জেনে রেখো যে, তোমাদের মাবুদ আল্লাহ্ই মাবুদ। তিনি বিশ্বস্ত; যারা তাঁকে মহব্বত করে ও তাঁর হুকুমগুলো পালন করে তাদের জন্য তিনি যে বেবস্থাপনা করেছেন তা তিনি হাজার হাজার পুরুষ পর্যন্ত রক্ষা করেন এবং তাদের প্রতি তাঁর অটল মহব্বত দেখান।

আল-জবুর; ৫ রূকু ১২ আয়াত – হে মাবুদ, যারা তোমার ভক্ত তাদের উপর সত্যিই তোমার দোয়া রয়েছে, তোমার রহমত দিয়ে তুমি তাদের ঢালের মত করে ঘিরে রেখেছ।

ইঞ্জির শরীফ; লুক ১ঃ ৫০ আয়াত – যারা তাঁকে ভয় করে তাদের প্রতি তিনি মমতা করেন, বংশের পর বংশ ধরেই করেন।

আল-কোরআন; সূরা আ’রাফ ৯৬ আয়াত – যদি সেই সকল জনপদের অধিবাসীবৃন্দ ঈমান আনিত ও তাকওয়া অবলম্বন করিত তবে আমি তাদের জন্য আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর কল্যাণ উম্মুক্ত করতাম ….।

উপরোল্লোখিত কিতাবের আয়াত সমূহের মাধ্যমে এটা স্পষ্ট বুঝা যায় যে, খোদা তাঁর সৃষ্ট মানবজাতির প্রতি অতীব যত্নশীল। তিনি যুগে যুগে বিভিন্ন নবি ও রসুলগণের মাধ্যমে আমাদের জন্য তাঁর আকাংখার কথা প্রকাশ করেছেন এবং তাঁর আকাংখা, যেন আমরা তাঁর কাছ থেকে সত্যিকারের শান্তি, আনন্দ, নিরাপত্তা ও পরিচালনা লাভ করতে পারি। আর এ সমস্ত একমাত্র তাঁর সাথে ঘনিষ্ট রূহানিক সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে লাভ করা যায়।

আমরা জানি, একটি পরিত্যক্ত বৈদ্যুতিক বাল্ব, যাতে অনেক ময়লা জমে আছে, তা যদি বৈদ্যুতিক লাইনের সাথে সংযোগ দেয়া হয় তাহলে সেই বাল্বটি মুহূর্তে পরিবর্তিত হয়ে যায় এবং তা পূর্বের ন্যায় আলোকিত করতে পারবে না। কিন্তু একটি নতুন বা পরিষ্কার বাল্বের আলো উজ্জ্বল ও প্রাণন্ত হয়ে ওঠে এবং সেই বাল্বটি সুন্দর ও আকর্ষণীয় হয়ে অন্যকে পথ চলতে সাহায্য করে। এটা একটি উপমা মাত্র যা থেকে আমরা বুঝতে পারি, খোদাকে জানার পূর্বে এবং জানার পরে তাঁর সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্কে আবদ্ধ হলে আমাদের অবস্থান কি রকম হয়। এখানে পবিত্র কোরআন ও কিতাবুল মোকাদ্দস থেকে একই বিষয়ে কিছু আয়াত উল্লেখ করা হলোঃ

নবিদের কিতাব; ইশাইয় ৬০ঃ ২০ আয়াত – মাবুদই হবেন তোমার চিরস্থায়ী আলো;

আল-জবুর; ১৬ রূকু ১১ আয়াত – জীবনের পথ তুমি আমাকে শিখিয়েছ; তোমার দরবারে থাকায় আছে পরিপূর্ণ আনন্দ, আর তোমার ডান পাশে রয়েছে চিরকালের সুখ। ২৭ রূকু ১ আয়াত – মাবুদই আমার নূর ও আমার উদ্ধারকর্তা, আমি কাকে ভয় করব? মাবুদই আমার জীবনের কেল্লা, আমি কাকে দেখে ভয়ে কাঁপব?

ইঞ্জিল শরীফ; ১ পিতর ২ঃ ৯ আয়াত – কিন্তু তোমরা তো বাছাই করা বংশ হয়েছ; তোমাদের দিয়ে গড়া হয়েছে ইমামদের রাজ্য; তোমরা পবিত্র জাতি ও তাঁর নিজের বান্দা হয়েছ; যেন অন্ধকার থেকে যিনি তোমাদের তাঁর আশ্চর্য নূরের মধ্যে ডেকে এনেছেন তোমরা তাঁরই গুণগান কর। আল-কোরআন; সুরা নূর ৩৫ আয়াত – আল্লাহ্ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর জ্যোতি, তাঁর জ্যোতির উপমা যেন একটি দীপাধার যার মধ্যে আছে এক প্রদীপ, প্রদীপটি একটি কাঁচের আবরণের মধ্যে স্থাপিত, কাঁচের আবরণটি উজ্জ্বল নক্ষত্র সদৃশ; ইহা প্রজ্বলিত করা হয় পূত-পবিত্র যায়াত‚ন বৃক্ষের তৈল দ্বারা যা প্রাচ্যের নয়, প্রতীচ্যেরও নয়, অগ্নি উহাকে স্পর্শ না করলেও যেন উহার তেল উজ্জ্বল আলো দিতেছে; জ্যোতির উপর জ্যোতি! আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথনির্দেশ করেন তাঁর জ্যোতির দিকে।

সুতরাং, আমরা বুঝতে পারছি যে, আমাদের জীবনের জন্য খোদার একটা ই”ছা বা আকাংখা আছে। আর তা হলো – আমরা যেন খোদার সান্নিধ্যে অবস্থান করি। আমরা যেন পুনরায় খোদার সাথে বেহেস্তে বসবাস করি। সত্যিই, তিনি আমাদের মহব্বত করেন। কিš‘ আমরা জানি, আমাদের গুনাহ্পূর্ণ জীবন আমাদেরকে খোদার সেই মহব্বত থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে।

এর পরের পাঠে আমরা দেখব, কিভাবে “গুনাহ্ আমাদেরকে খোদার কাছ থেকে বিচ্ছিন করে রেখেছে।” তার আগে এই পাঠটি ভাল করে পড়ে সাথে সংযুক্ত প্রশ্নপত্রটি পূরণ করে আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিন।

খোদা আপনাকে তাঁর কালাম বুঝবার তৌফিক দান করুন। আমেন।

পাঠ ১ঃ প্রশ্নপত্র

প্রত্যেক প্রশ্নের সঠিক উত্তরটির বৃত্তের মধ্যে ক্লিক করুন, এবং নীচে Submit- বাটন এ ক্লিক করে আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিন।

Welcome to your পাঠঃ ১

জেলা / এলাকা
নাম
বয়স
ঠিকানা
পেশা
ই-মেইল
মোবাইল

১. খোদার তাঁর সৃষ্টির মধ্যে কাকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসেন?

২. খোদা ও মানুষের সুন্দর সম্পর্কের মৃত্যু কিভাবে ঘটেছিল?

৩. খোদা এবং মানুষের সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য খোদার ওয়াদা কি ছিল?

৪. মানুষ এবং শয়তানের মধ্যে শত্রæতা কেন?

৫. সূরা আ’রাফ ৯৬ আয়াত অনুসারে কিসে মানবজাতির কল্যাণ সাধিত হয়?

৬. খোদা তাঁর সৃষ্ট মানবজাতির উপর কেন অতীব যতœশীল?

৭. যারা খোদাকে ভয় করে তাদের প্রতি খোদা কিরূপ ব্যবহার করেন?

৮. সূরা নূর ৩৫ আয়াত অনুসারে খোদার স্বরূপ কি?

৯. আমদের জীবনের জন্য খোদার ই”ছা কি?

১০. খোদাকে ভয় করা বলতে আসলে কি বুঝানো হয়েছে?

Translate »